Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

** নিয়মিত ইউপি ট্যাক্স পরিশোধ করুন, ইউপির স্মার্ট সেবা গ্রহণ করুন- শেখ মোঃ গোলাম হায়দার, চেয়ারম্যান। ** ফতেপুর ইউনিয়নবাসীকে জানানো যাচ্ছে যে, ০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম ও মৃত্যু তথ্য ইউনিয়নে প্রদান করে বিনামূল্যে স্মার্ট সনদ গ্রহণ করুন- শেখ মোঃ গোলাম হায়দার, চেয়ারম্যান (নিবন্ধক) ও মোঃ আব্দুল খালেক, ইউপি সচিব (সহকারী নিবন্ধক)।


ফতেপুরের ইতিহাস

ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার অন্তর্গত ফতেপুর একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জনপদ। মহেশপুর উপজেলার অন্যতম ইউনিয়ন ফতেপুর এবং ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ফতেপুরেই অবস্থিত। ঝিনাইদহ হতে ফতেপুরের দূরত্ব প্রায় ৫০কি.মি.। খালিশপুরের ৩ কি.মি. পশ্চিমে ফতেপুর বাসস্টেশন। মহেশপুর সদর হতে উত্তরদিকে ফতেপুরের দূরত্ব ৭ কি.মি.। ফতেপুর নামকরণ সম্বন্ধে সঠিক প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যায় না। বাংলার পরবর্তী ইলিয়াস শাহী বংশের অন্যতম সুলতান ছিলেন | জালালউদ্দিন আবুল মুজফফর ফতেহ শাহ (১৪৮১-১৪৮৭ খ্রি.) আবুল ফজল প্রণীত  'তাবাকাত ই আকবরি’ গ্রন্থে লিখিত আছে, তিনি ছিলেন বুদ্ধিমান ও উদার শাসক । ফতেহ শাহ রাজত্ব করেন সাত বছর ৫ মাস। বৃহত্তর যশোর তাঁর রাজ্যভুক্ত ছিল। পক্ষিণবঙ্গ পরিভ্রমণকালে তিনি কপোতাক্ষ নদ তীরবর্তী ফতেপুর এসে সাময়িক আস্তানা করে এখানে অবস্থান করেন কিছুদিন। সে হতে এ স্থানের নামকরণ হয় ফতেপুর । 'পুর’ শব্দের অর্থ জনববসতি স্থান। ক্ষেত্রানুসন্ধানকালে (১৪-০১-২০০৮) আমি এ কথা | শুনতে পারি জনৈক প্রবীণ ব্যক্তির নিকট থেকে। ফতেপুর নামকরণ সম্বন্ধে এ তথ্য যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়। কেননা বাংলার ইতিহাসে সুলতান ফতেশাহর নাম পাওয়া যায়। সে হতে এ স্থানের নামকরণ ফতেপুর হয়েছে এবং সে নামেই ফতেপুর মৌজা ও ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত। এখানে ফতেপুর ইউনিয়নের সরকারি ভূমি রাজস্ব অফিস আছে। ভূমিহীনদের একটি আশ্রয়ণ কেন্দ্রও আছে এখানে। পাকিস্তান আমলে এখানে বাজার ছিল, যাকে বলা হতো হাটখোলা। কালীগঞ্জ থেকে জীবননগরের (চুয়াডাঙ্গা জেলায়) দিকে যে পাকা সড়ক চলে গেছে, সেই সড়কের আধা কি.মি. দক্ষিণে ফতেপুর বাজার অবস্থিত। রবিবার ও বুধবারে সাপ্তাহিক হাট বসে এখানে। বাজারের দক্ষিণ-পূর্ব | দিকে ফতেপুর বাওড়। এখানে একটি মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র আছে।

ফতেপুর বাওড়ের মাঝখানে দ্বীপাকারে একটি গ্রাম বিদ্যমান। গ্রামের নাম বেড়েরমাঠ। এ এ চারদিকে জল সেজন্য গ্রামের নাম বেড়েরমাঠ বলে স্থানীয় লোকের ধারণা। ফতেপুরে  আছে একটি সরকারি স্বাস্থ্য সেবা ক্লিনিক। প্রসূতি মহিলাদের সেবা ও শুশ্রুষা দেয়া এ ক্লিনিকের মাধ্যমে।

ফতেপুর চ্যাটার্জী পরিবার অত্র অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষিত পরিবার হিসেবে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ আমলে এ পরিবারে ৫ জন জজ ছিলেন বলে শোনা যায়। অমূল্য গোপাল চ্যাটার্জী ছিলেন কলকাতা জজকোর্টের একজন নামকরা জজ (বিচারক), তিনি নাকি ব্যারিস্টার ছিলেন। সে কারণে তিনি হতে পেরেছিলেন কলকাতা জজ কোর্টের অন্য একজন নামকরা জজ (বিচারক)। ফতেপুরে এ-পরিবারের সুরম্য পাকা বাড়ি ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সকলে ভারতে চলে যান। ফতেপুর বকুলতলায় বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে কপোতাক্ষ নদীর তীরে একটি পুরাতন বাড়ি আছে। এই বাড়ি চ্যাটার্জীদের বাড়ি নামে পরিচিত, এছাড়াও মুখার্জীদের একটি বাড়ি দেখা যায় এখানে এই মুখার্জী পরিবারে ৩ জন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ফতেপুরে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের একটি কাচারি ছিল। সেজন্য এই জায়গাটির নাম হয়েছে কৃষ্ণচন্দ্রপুর । পরিত্যক্ত বাসভবন ভূমিহীনদের আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। বর্তমানে এ বাড়িতে বসবাস করছে কয়েকটি ভূমিহীন পরিবার। ভারত থেকে আগত মোহাজেরদের একটি কলোনি আছে নিমতলা নামক স্থানে।

ফতেপুরে ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। সামছুদ্দিন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যাল। (স্থাপিত-১৯৮৪)। ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফতেপুর দাখিল মাদরাসা (স্থাপিত-২০০৩ সাল)। গাজীরন্নেছা নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত ২০০৮ সালে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাতা ফতেপুরের আব্দুর রহমানের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। ব্রিটিশ আমলে ফতেপুর ছিল হিন্দুপ্রধান গ্রাম। নানা ধরনের পূজা-পার্বণ অনুষ্ঠিত হতে এখানে মহাধুমধামে। চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক পূজা এখানে পালিত হয় বেশ সাড়ম্বরে। শৈবভক্ত হিন্দুরা চড়ক পূজার আয়োজন করে থাকেন প্রতিবছর। কোনো ভক্তের পিঠে বড় বড়শি ফুটিয়ে চড়ক ঘুরানো হয় চড়ক পূজার সময়। ২রা বৈশাখে চড়ক ঘুরানো হয় চড়ক গাছ তলায়। দূর দূরান্ত থেকে শৈবভক্ত হিন্দুদের আগমনে ঘটে রক্ত ঝরা চড়ক পূজায়। পূজা উপলক্ষে ৩ দিন মেলা বসে ফতেপুর বাজারে। এটা তাদের জন্য গৌরবের বিষয় বলে মনে করে। চড়ক ঘুরিয়ে শরীরের রক্ত ঝরানো চড়ক পূজা। ঝিনাইদহ জেলায় আর কোথায়ও পালিত হয় না। শুধুমাত্র ফতেপুরেই হিন্দুরা এ ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন যুগ যুগ ধরে।

(ঝিনাইদহ জেলার ইতিহাস পরিক্রমা বই থেকে সংগৃহীত)